সংবাদ শিরোনাম

গৃহবধূ অপহরণ করতে যাওয়া সেই যুবলীগ নেতা বহিষ্কার

সাটুরিয়ায় বসাক পরিবারে যুবলীগ নেতার হামলার ঘটনা বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হলে মানিকগঞ্জ জেলাসহ দেশজুড়ে আলোচিত সংবাদ হয় ঘটনাটি। ঘটনার সত্যতা তদন্তে নামে পুলিশের বিভিন্ন টিম। পরে সোমবার (২৯ এপ্রিল) দুপুরে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রাজধানী ঢাকার সাভার এলাকা থেকে উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল খালেককে (৩৫) গ্রেফতার করে পুলিশ।

উপজেলা যুবলীগের সভাপতি মোঃ রেজাউল করিম মোবাইল ফোনে যুবলীগের কমিটি থেকে আব্দুল খালেকের বহিষ্কারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। জেলা কমিটির সভাপতি বাবু সুদেব সাহার সভাপতিত্বে জরুরী সভায় এ সিন্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানান উপজেলা যুবলীগের সভাপতি মোঃ রেজাউল করিম।

তিনি আরো জানান, সংগঠনের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী মোঃ ফারুক হোসেনকে উপজেলা যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।

এদিকে বহিষ্কৃত যুবলীগ নেতা আব্দুল খালেকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় অপহরণের চেষ্টা, চাঁদাবাজি, বাকী খেয়ে টাকা না দেয়া, টেন্ডারবাজিসহ অসংখ্য নারী কেলেঙ্কারির অভিযোগ রয়েছে।

উল্লেখ্য, গত শনিবার (২৭ এপ্রিল) সাটুরিয়া উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল খালেক ও যুবলীগের কর্মী শাহীনুর ইসলাম ভান্ডারীপাড়ার দীপক বসাকের স্ত্রী টুম্পাকে অপহরণ করতে যায়। এ সময় যুবলীগ নেতা খালেকের সঙ্গে টুম্পার স্বামী দীপকের কথা কটাকাটি হয়।

একপর্যায়ে দু’পক্ষের সংঘর্ষ হলে দীপকের পরিবারের সদস্যরা যুবলীগ নেতা আব্দুল খালেককে ঘরে তালা দিয়ে আটকে রাখে। এ সময় আঘাতে তার মাথার একাধিকস্থানে ফেটে যায়। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে সাটুরিয়া হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।

এদিকে যুবলীগ নেতাকে মারধরের খবর ছড়িয়ে পড়লে ওই হিন্দু পরিবারে হামলা করে খালেকের সমর্থকরা। হামলাকারীরা দ্বিপ বসাক, দীপক বসাক, দিনেশ বসাক ও দুলাল বসাককে মারধর করে। পরে স্থানীয়রা তাদেরকে উদ্ধার করে সাটুরিয়া হাসপাতালে ভর্তি করেন।

গৃহবধূ টুম্পা বসাকের স্বামী দীপক জানায়, তার স্ত্রী টুম্পা বসাক একটি বেসরকারি স্কুলে চাকরি করেন। প্রায় দুই বছর ধরে স্কুলে আসা-যাওয়ার পথে যুবলীগ নেতা আব্দুল খালেক তাকে উক্ত্যক্ত করে আসছিলো। মাঝে মধ্যে বিষয়টি আওয়ামী লীগ নেতাদের জানানো হলেও কোনো লাভ হয়নি। যুবলীগ নেতার অত্যাচারে আমার স্ত্রী কিছুদিন আগে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করতে গিয়েছিল।

তিনি আরো জানান, শনিবার যুবলীগ নেতা খালেক আমার বাসায় গিয়ে বলেন, তোর স্ত্রী তোকে তালাক দিয়ে আমাকে বিয়ে করেছে। এ সময় বিয়ের প্রমাণ দেখতে চাইলে তিনি একটি স্বাক্ষরবিহীন স্ট্যাম্প দেখিয়েই আমার স্ত্রীর হাত ধরে দুই তলা থেকে নিচে টেনে হেঁচড়ে নামাতে থাকেন। তখন খালেকের সঙ্গে আমার কথা কাটাকাটি হয়।

একপর্যায়ে নিজের পরিবারকে রক্ষা করতে যুবলীগ নেতার সঙ্গে ধস্তাধস্তি হলে তিনি পড়ে যান। এতে মাথায় আঘাত পান যুবলীগ নেতা খালেক।

ভূক্তভোগী গৃহবধূ টুম্পা বসাক অভিযোগ করেন, তাকে ব্ল্যাকমেইল করে একাধিকবার যৌন হয়রানির চেষ্টা করে যুবলীগ নেতা আব্দুল খালেক। দীর্ঘদিন ধরে তিনি আমাকে রাস্তায় উক্ত্যক্ত করে আসছিলেন। এ ব্যাপারে একাধিকবার সাটুরিয়া থানাকে অবগত করা হয়েছে। যুবলীগ নেতার বিরুদ্ধে থানায় এর আগেও একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছিল। আমরা হিন্দু বলে আমাদের ওপর নির্যাতন প্রতিরোধ করার কেউ না থাকায় গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করতে চেষ্টা করেছি। তিনি ও তার পরিবার ওই যুবলীগ নেতার হাত থেকে বাঁচতে চায় বলেও আকুতি জানান তিনি।

টুম্পার বাবা দিনেশ বসাক বলেন, আমরা সংখ্যালঘু বলে যুবলীগ নেতা আব্দুল খালেকের ভয়ে চুপচাপ ছিলাম। সে আমাকেও হুমকি-ধামকি দিয়েছে। আমার মেয়ের নামে কিছু জমি আছে। সেই জমি ওই যুবলীগ নেতা দখল করে নিতে চায়। নিরুপায় হয়ে সাটুরিয়া থানা আওয়ামী লীগের নেতাদের কাছে এ ব্যাপারে অনেকবার অভিযোগ করা হয়েছে। অভিযোগ করেও কোনো লাভ হয়নি। সে শনিবার বাসায় এসে আমার মেয়েকে তুলে নিতে গেলে এ সংঘর্ষ হয়।

এর আগে ওই হিন্দু পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় অভিযোগ করলে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে।

সংবাদটি পছন্দ হলে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




© All rights reserved © 2017 Somoynewsbd24.Com